গুরুতর অসুস্থ অভিনেত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেসের সংসদ সদস্য মিমি চক্রবর্তী।
গত ২২ জুন দক্ষিণ কলকাতার কসবা অঞ্চলে ‘ভুয়া’ ভ্যাকসিন নিয়েছিলেন তিনি। আর তার ঠিক চারদিনের মাথায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন এই তারকা। শনিবার (২৬ জুন) ভোর থেকেই সমস্যা শুরু হয়েছে অভিনেত্রীর শরীরে। এমনিতেই অভিনেত্রীর গলব্লাডারের সমস্যা রয়েছে। জানা গিয়েছে, ভোরের দিকে অসহ্য পেটে ব্যথা শুরু হয় মিমির। সঙ্গে ঘাম দিতে থাকে। ডিহাইড্রেশনের সমস্যা দেখা দেয়। রক্তচাপও বেশ কিছুটা কম ছিল। তারপর ভোর ৬টায় মিমির পারিবারিক চিকিৎসক তার বাড়িতে আসে। চিকিৎসক মিমিকে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দিলেও রাজি হননি তিনি। আপাতত বাড়িতে থেকেই চলছে চিকিৎসা। গত মঙ্গলবার (২২ জুন) অজান্তে অনুমোদনহীন একটি ক্যাম্প থেকে ভুয়া টিকা নিয়েছিলেন মিমি চক্রবর্তী। টিকা নেওয়ার পরই মিমিই প্রতারক দেবাঞ্জন দেবের পর্দা ফাঁস করেছিলেন নিজেই। যা নিয়ে রাজ্যে বড়সড় ভ্যাকসিন চক্রান্তের হদিশ পেয়েছে মমতার সরকার। ওইদিন টিকা নেওয়ার পর সার্টিফিকেট না পাওয়ায় সন্দেহ হয় মিমির। তারপরই ধীরে ধীরে ভ্যাকসিন চক্রের পর্দা উঠতে থাকে। জানা যায়, গত কয়েকমাস ধরেই দেবাঞ্জন দেব কলকাতাসহ বিভিন্ন এলাকায় ভুয়া ভ্যাকসিন ক্যাম্প চালিয়েছেন। তাতে টিকা নিয়েছে কয়েকশ’ মানুষ। মিমি যেদিন নেন, সেদিনই দু’শো মানুষ টিকা নিয়েছিলেন।
পুলিশি তদন্তে জানা গিয়েছে, কসবার ক্যাম্পে কোভিশিল্ডের নাম করে এক ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়েছিল। যার জেনেরিক নাম অ্য়ামিকাসিন। সেই ভায়েলের উপর কোভিশিল্ডের স্টিকার লাগিয়ে, সেই ওষুধ সাধারণ মানুষকে টিকা বলে চালিয়ে দিয়েছিল দেবাঞ্জন দেব। এমনকি দেবাঞ্জন নিজেকে ইন্ডিয়ান অ্যাডমিনেস্ট্রেটিভ সার্ভিস (আইএএস) অফিসার বলেও পরিচয় দিতেন। যদিও সেটাও ছিল ভুয়া। পাশাপাশি নিজেকে কলকাতা করপোরেশনের বড় কর্তা বলে দাবি করতেন। বিগত বছরগুলোয় দেবাঞ্জনকে দেখা গিয়েছে কলকাতার মেয়র ফিরাদ হাকিমসহ রাজ্যের অতিবড় মাপের নেতামন্ত্রীদের সঙ্গে। এমন কী ভিআইপি হিসেবে গাড়িতে নীল বাতিও ব্যবহার করতেন দেবাঞ্জন। সাধারণ রাজ্যবাসীসহ বিরোধীদের প্রশ্ন এতগুলো বছর দেবাঞ্জনকে কেন চিনতে পারলো না প্রশাসন। নাকি, না চেনার ভান করেই থাকত প্রশাসন। সর্ষের মধ্যে ভুত কিনা তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। যদিও সেই ভুয়া টিকার প্রভাবেই, অভিনেতা-সাংসদের শরীর খারাপ হয়েছে কিনা, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
তবে এই ঘটনায় প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দোষীদের কড়া শাস্তির নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। ভুয়া ভ্যাকসিন ক্যাম্পের আয়োজক ধৃত দেবাঞ্জন দেবের বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা করার জন্য কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিযুক্ত দেবাঞ্জন দেবের সঙ্গে কাদের যোগাযোগ ছিল? কোন কোন কর্তা, নেতা, মন্ত্রী বা কর্মী জড়িত আছেন কিনা? সবটাই খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।